আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): একটি অ্যাক্টিভিস্ট গ্রুপ আয়ারল্যান্ডের ডেটা প্রোটেকশন কমিশন (DPC)-এ অভিযোগ করে মাইক্রোসফটের মাধ্যমে ইসরায়েলের সামরিক ও সরকারি ডেটা প্রসেসিং তদন্ত এবং যেকোনো বেআইনি ডেটা প্রক্রিয়াকরণ স্থগিত করার দাবি জানায়।
ব্লুমবার্গ পর্যালোচিত অভিযোগটি মাইক্রোসফটের আয়ারল্যান্ডভিত্তিক কার্যক্রমকে কেন্দ্র করে করা হয়েছে, যেখানে কোম্পানির ইউরোপীয় সদরদপ্তর অবস্থিত এবং যেখানে ইইউর কঠোর ডেটা আইন—GDPR—প্রয়োগ করা হয়।
ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মাইক্রোসফটের সম্পর্ক নিয়ে এরই মধ্যে কর্মী ও মানবাধিকার কর্মীদের সমালোচনা বাড়ছিল, বিশেষত ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে।
এক বিবৃতিতে মাইক্রোসফট জানায়, “গ্রাহকই তার ডেটার মালিক। আগস্টে ডেটা স্থানান্তরের সিদ্ধান্তও গ্রাহকের নিজের।” প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে, এই ডেটা স্থানান্তর তাদের অভ্যন্তরীণ তদন্তে কোনো বাধা সৃষ্টি করেনি। তদন্তের ভিত্তিতে সেপ্টেম্বর মাসে কিছু সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং পরে গ্রাহক অন্য প্রদানকারীর কাছে ডেটা সরিয়ে নেয়।
আয়ারল্যান্ডের ডেটা প্রোটেকশন কমিশন অভিযোগপত্র পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং প্রাথমিক মূল্যায়ন চলছে।
ইসরায়েলের যুদ্ধাপরাধ নিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা
গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বহুবার জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের রিপোর্টে উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বেসামরিক জনগণকে অনাহারে রাখা এবং ইচ্ছাকৃত হামলার মতো যুদ্ধাপরাধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে—যা ইসরায়েল অস্বীকার করে।
ফাঁস হওয়া নথিতে মিলল নজরদারি ডেটার উৎস
গার্ডিয়ান ও ইসরায়েলি মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, মাইক্রোসফটের সার্ভারে ছিল লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনির ফোন কল রেকর্ড—যা গাজায় বিমান হামলার লক্ষ্য নির্ধারণে ব্যবহার করা হয়। ফাঁস হওয়া নথিতে দেখা যায়, এসব ডেটার বেশিরভাগ ছিল নেদারল্যান্ডসে, আর কিছু অংশ আয়ারল্যান্ডে।
রিপোর্ট প্রকাশের একদিন পরই ইসরায়েলি সামরিক সংযুক্ত একটি অ্যাকাউন্ট তড়িঘড়ি করে মাইক্রোসফটের তিনটি অ্যাজুর ক্লাউড অ্যাকাউন্টের ডেটা ট্রান্সফার লিমিট বাড়ানোর অনুরোধ করে। মাইক্রোসফট সমর্থন টিম তা অনুমোদন করার পর দেখা যায়, সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টগুলোতে সংরক্ষিত ডেটা দ্রুত কমে গেছে।
হুইসেলব্লোয়ার সমর্থিত অভিযোগে নতুন চাপ
আইরিশ কাউন্সিল ফর সিভিল লিবার্টিজ এবং প্রযুক্তি-অভিযান সংগঠন Ekō—হুইসেলব্লোয়ার তথ্যসহ—এই অভিযোগ জমা দিয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আকস্মিক ডেটা স্থানান্তরের কারণে আয়ারল্যান্ড GDPR-এর সংবেদনশীল ডেটা তদারকির ক্ষমতা হারিয়েছে।
মাইক্রোসফট জানিয়েছিল, গার্ডিয়ানের তদন্ত প্রকাশের পর তারা নিজস্ব তদন্ত শুরু করে এবং সেপ্টেম্বর থেকে কিছু সামরিক ব্যবহার নিষ্ক্রিয় করে। কিন্তু অভিযোগকারীরা বলছেন, এখনো ইইউর ডেটা সেন্টারে ইসরায়েলের ফিলিস্তিনিদের ওপর নজরদারির অ্যাপ ব্যবহার হচ্ছে—যেমন ‘আলমুনাস্সেক’ অ্যাপ, যা ফিলিস্তিনিদের কাজ ও ভ্রমণ পারমিট ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হয় এবং ফোন ট্র্যাকিংসহ নজরদারির অভিযোগ রয়েছে। অ্যাপটির আংশিক অবকাঠামো নাকি মাইক্রোসফটের আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সার্ভারেই চলছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, “মাইক্রোসফটের সার্ভারগুলো মিলিয়ন ফিলিস্তিনির ওপর চলমান আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের শৃঙ্খলের অংশ হয়ে উঠেছে।”
Your Comment